সাধু ভাষা ও চলিত ভাষার পার্থক্য ——

by | Aug 22, 2022 | বাংলা, BCS, Others

  •  তৎসম ও অতৎসম শব্দের ব্যবহারে
  •  ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদের রূপে
  •  শব্দের কথা ও লেখা রূপে
  •  বাক্যের সরলতা ও জটিলতায়

প্রশ্নঃ সাধু ভাষা ও চলিত ভাষার পার্থক্য ——
উত্তরঃ ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদের রূপে
ব্যাখ্যাঃ সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য
উত্তর: সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য: বাংলা ভাষার দুটি রূপ—সাধু ভাষা ও চলিত ভাষা। দুটি রূপের মধ্যে যেমন প্রকৃতিগত সাদৃশ্য
রয়েছে, তেমনি পার্থক্যও রয়েছে। নিচে এ দুয়ের পার্থক্য আলোচনা করা হলো।

সাধু ভাষা

চলিত ভাষা

১। যে ভাষায় সাধারণত সাহিত্য রচিত হয় এবং যা মার্জিত ও সর্বজনস্বীকৃত, তাই সাধু ভাষা। ১। শিক্ষিত লোক সাধারণ কথাবার্তায় যে ভাষা ব্যবহার করে থাকে, তা – ই চলিত ভাষা।
২। সাধু ভাষা ব্যাকরণের সুনির্দিষ্ট ও সুনির্ধারিত নিয়মের অনুসারী। ২। চলিত ভাষার সুনির্ধারিত ব্যাকরণ আজও তৈরি হয়নি।
৩। সাধু ভাষা গুরুগম্ভীর ও আভিজাত্যের অধিকারী। ৩। চলিত ভাষা সহজ ও স্বাভাবিক। এ ভাষা মানুষের মনোভাব প্রকাশে উপযোগী।
৪। সাধু ভাষার কাঠামো সাধারণত অপরিবর্তনীয়। ৪। চলিত ভাষা পরিবর্তনশীল।
৫। সাধু ভাষা কৃত্রিম। ৫। চলিত ভাষা কৃত্রিমতা – বর্জিত।
৬। সাধু ভাষা নাটকের সংলাপ, আলাপ – আলোচনা ও বক্তৃতায় তেমন উপযোগী নয়। ৬। চলিত ভাষা নাটকের সংলাপ, আলাপ – আলোচনা ও বক্তৃতায় বেশ উপযোগী।
৭। সাধু ভাষায় ক্রিয়া ও সর্বনাম পদগুলো সাধারণত দীর্ঘ হয়ে থাকে। যেমন—খাইতেছি, তাহারা ইত্যাদি। ৭। চলিত ভাষায় ক্রিয়া এবং সর্বনাম পদগুলো সংক্ষিপ্ত। যেমন—খাচ্ছি, তারা ইত্যাদি।
৮। এ ভাষা প্রাচীন। ৮। এটি আধুনিক।
৯। সাধু ভাষায় তৎসম শব্দের প্রয়োগ বেশি। ৯। চলিত ভাষায় অর্ধতৎসম, তদ্ভব, দেশি ও বিদেশি শব্দের প্রয়োগ বেশি।
১০। সাধু ভাষায় অপনিহিত ও অভিশ্রুতির ব্যবহার নেই। ১০। চলিত ভাষায় এদের প্রয়োগ লক্ষণীয়।


সাধুরীতি থেকে চলিতরীতিতে পরিবর্তনের নিয়ম
নিচে উল্লিখিত নিয়মগুলো অনুসরণ করে সাধু ভাষাকে চলিত ভাষায় রূপান্তরিত করা যায়:

ই – স্বরধ্বনির লোপ: ক্রিয়াপদের মধ্যে ই – স্বরধ্বনি থাকলে চলিত রীতিতে ই – স্বরধ্বনি লোপ পায়। যেমন—খাইব>খাব, আসিবে>আসবে।

উ – স্বরধ্বনির লোপ: চলিত রীতিতে উ – স্বরধ্বনি লোপ পায়। যেমন—হউক>হোক, থাউক>থাক।

হ – কারের লোপ: চলিত ভাষায় রূপান্তরের সময় পদের মধ্যে হ – কারের লোপ হয়। যেমন—তাহা>তা, যাহা>যা।

উ – ধ্বনির পরিবর্তন: পদের শেষে অ – আ স্বরধ্বনি থাকলে চলিতরীতিতে পূর্ববর্তী উ – স্বরধ্বনি ও – ধ্বনিতে পরিবর্তিত হয়।যেমন—শুন>শোন উঠে>ওঠে।

আ – ধ্বনির পরিবর্তন: পূর্ববর্তী ই – ধ্বনির প্রভাবে পরবর্তী অক্ষরের আ – ধ্বনি এ – ধ্বনিতে পরিবর্তিত হয়। যেমন—গিয়া>গিয়ে মিঠা>মিঠে।

অপিনিহিতি, অভিশ্রুতি ও স্বরসংগতির প্রভাবে পরিবর্তন: অপিনিহিত, অভিশ্রুতি ও স্বরসংগতির প্রভাবে সাধুরীতির পরিবর্তন ঘটে। যেমন—করিয়া>করে, ছুটিয়া>ছুটে।
উদাহরণ:

সাধুরীতি: দেখিলাম, এই সতেরো বছরের মেয়েটির ওপরে যৌবনের সমস্ত আলো আসিয়া পড়িয়াছে, কিন্তু এখনো কৈশোরের কোল হইতে সে জাগিয়া উঠে নাই। ঠিক যেন শৈলচূড়ার বরফের উপর সকালের আলো ঠিকরিয়া পড়িয়াছে, কিন্তু বরফ এখনো গলিল না। আমি জানি, কী অকলঙ্ক শুভ্র সে!

চলিতরীতি: দেখলাম, এ সতেরো বছরের মেয়েটির ওপরে যৌবনের সমস্ত আলো এসে পড়েছে, কিন্তু এখনো কৈশোরের কোল থেকে সে জেগে ওঠেনি। ঠিক যেন শৈলচূড়ার বরফের ওপর সকালের আলো ঠিকরে পড়েছে, কিন্তু বরফ এখনো গলল না। আমি জানি, কী অকলঙ্ক শুভ্র সে!

ABOUT THE AUTHOR

Admin